“ক্ষনিকের আপন”
“ক্ষনিকের আপন”
সুতনু দাস (নন্দীগ্রাম,পুর্ব মেদিনীপুর)
(বর্তমান ছাত্র-বিদ্যাসাগর টিচার্স ট্রেনিং কলেজ )
আজ একুশের দশকে দাঁড়িয়ে আমরা প্রি-মোডার্ন।আমরা আমাদের ছোটবেলাকার অতীত কে ভূলছি গতিশীলতার দরুন। বর্তমান গুগল, ইন্টারনেটের যুগে ধ্বংশের পথে পাশের শীটে বসে থাকা ব্যাক্তির সঙ্গে মুখোমুখি আলাপচারিতা।আমরা কতোই না সহজে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি বিমূঢ় পরিস্থিতি গুলি ফোনের দ্বারা।আসলে যতোই দিন এগোচ্ছে ততই দিন দিন আমাদের সামনে বেরিয়ে আসছে দধীচির হাড়। কম্পিউটারের যুগে আমরা এতটাই ব্যাস্ত যে ভালো করে চিনতে পারি না আমাদের প্রতিবেশী কে,অতছ মানুষ সমাজবদ্ধ জীব।পা পিছলে কেউ রাস্তায় পড়ে গেলে আমরা তাকে সাহায্য করার চেয়ে মজা পাই বেশি। অতছ মানুষ প্রগতিশীলতার শীর্ষে।
আজকের যুবসমাজ মারাত্মকভাবে আটকে পড়েছে অনলাইন গেমস গুলোর মধ্যে। আসলে গাছের কান্ড যদি সোজা না হয় তবে পাতার বা কী দোষ? সবকিছু কে দারুন ভাবে উৎসাহিত করে চলেছে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা। পাশের হারে এগিয়ে বাংলা সঙ্গে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধিতেও। এমনকি প্রতিঘন্টায় নোংরা ছবি দেখাতেও ভারতের গ্রাফ উর্ধ্বমুখি বাংলাদেশকে টপকাতে বেশি বাকি নেই। আলাউদ্দিন খিলজির আমলে প্রচলিত হওয়া গরিব,দুষ্থ, অসহায় শ্রেনীর মানুষদের প্রদান করা “রেশন ব্যবস্থা”র চাহিদা আজ আরোও বাড়ছে, এমনকি রেশনের জন্য ভুয়ো কাগজ পত্র তৈরির রেকর্ড ও আছে।অতছ তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভারতের অবস্থান প্রথম সারির প্রথম দিকেই।
দুর্নিতি,চরম উৎশৃঙ্খলতা, ভুয়ো ও অকার্যকর আইন, রাজনীতির চরম হিংসায় জ্বলে ঝলসে গেছে সমাজ ব্যবস্থা। জমির জন্য ভায়ে- ভায়ে দ্বন্দ্ব, পেনশনের টাকা না দেওয়ায় গলা টিপে বাবাকে হত্যা, তীর্থস্থানে মা কে ছেড়ে আসা, বৃদ্ধাশ্রমে জনসংখ্যার মেলা, দুধের চেয়ে মাদক বেশি বিক্রি হওয়া,ভিক্ষারী, অনাহারী মানুষের পাশে না দাঁড়িয়ে পতিতালয়ে পরিণত সুখলাভ , এগুলোই হলো প্রিমডার্ন এর একটা অন্যতম অনুষঙ্গ। হিংসা, বিদ্বেষ, চক্রান্তের নাগ ফাঁসে আসফাস করছে সমাজ ব্যবস্থা।“সবকা সাথ সবকা বিকাশ”আজ ওষ্ঠাগত।বিবাহ বিচ্ছেদের গ্রাফ এতটাই ভারী রামমোহন রায় বেঁচে থাকলে হতাশ হতেন।আমরা শহীদ, বিপ্লবীদের কথা ভূলে যাই কিন্তু স্টেটাস দিই ইংরেজী গায়কের জন্মদিনে। হাসপাতালে রোগীর থেকে অর্থনৈতিক শোষণ,ওপিডি র ব্যবস্থা দেখে মনে পড়ে মার্গারেট এর কথা।।আসলে আমাদের জীবন,সমাজ যখন সমাজের কু অভ্যাস ,কু রুচি দ্বারা তরবারির নানান আঘাতে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন তখন আমরা উপেক্ষা করে যাই ছোট ছোট গঠন মূলক বিষয় গুলোকে। এগুলি প্রাচীন কাল থেকেই বিদ্যমান।
আসলে পুরো মনুষ্য জগত যখন বিপদের সম্মুখীন হয় তখনই তাকে আমরা বলতে পারি মহাসঙ্কট ।আর তখনই একধরনের দ্বৈরথের দেখা পাই ।এক শ্রেণীর মানুষ নিজের স্বার্থ নিয়ে বাঁচে ,আর অপর এক শ্রেনীর মানুষের মধ্যে জাগে সৃষ্টি সুখের উল্লাসের উদ্দীপনা।আসলে কার্লমাক্সের তত্ত্বের বাইরে বেরিয়ে এসে যখন কথা বলবো তখন দেখবো আশ্চর্যজনক একটা বিষয়,সেটা হলো সমাজের অধিকাংশ মানুষই যখন সমান বিপদের সম্মুখীন হয় তখনই জন্ম নেয় সৌভাতৃত্ব বোধের । জানিনা মার্গারেট এর কী নাম দিতেন।
হাসপাতালের কথা যদি বলি দেখবো একটা অদ্ভুত রকমের ভাব প্রদানের ক্ষেত্র ,দেখবো অধিকাংশ অপেক্ষারত রোগীর পরিবারের মানুষজন শুরু করে দেয় তাদের আলাপচারিতার কাজ ।কেউ সংকীর্ণ জায়গায় মানিয়ে নিয়ে চলে নির্দ্ধিধায়, হাসপাতালের অজানা স্থানের চিহ্নিত করন,ডাক্তার আসার সময়,প্রভৃতি তে দারুন ভাবে একে অপরের প্রতি নিঃসঙ্কোচে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।আবার লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা অচেনা সামনের জনকে নিজের লাইনে থাকার উপস্থিতি জানিয়ে নিজের কাজ হাসিল করতে যাওয়া, রিপোর্টের নাম ডাকলে অবগত করতে বলা ,এই সব ক্ষেত্রে মানুষের সমাজবদ্ধশীলতার গুরুত্বের ছাপ উদীয়মান।যেমন নাপিতের দাঁড়ি কামানো দেখলে মনে হয় বিশ্বাস আজও অটুট।আমরা আরোও একটু ভালো করে দেখলে বুঝতে পারবো পশাপাশি বেডে শুয়ে থাকা দুই অসুস্থ ব্যক্তির তথা তার পরিবারের সঙ্গে মেলবন্ধন ঘটে কত সহজেই।যখন আমরা বাড়ীতে ফিরে আসি তখন স্মরন করি তাদের কথা। আবার আমরা ফিরে যাই ব্যাস্ত অশান্ত জীবন যাপনে।আসলে এই সম্পর্ক গুলোতে ক্ষনিকের জন্য হলেও দৃড় বিশ্বাস জন্মায় সৌভাতৃত্বের জাগৃতি ও ঘটে প্রগতিশীলতার প্রকাশ ও পায়।
ইতিহাস সাক্ষী আছে মনুষ্য সমাজের বৃহত্তর অংশ যখনই এমন সমস্যায় পড়েছে তখন কোনো দেব দেবী , ঈশ্বর, কিংবা আল্লা সরাসরি এসে উদ্ধার করেনি কিন্তু তিনি করিয়েছেন মানুষকে দিয়েই।যার রুপান্তর সৌভাতৃত্ব , ভালোবাসা,বিশ্বাস, প্রগতিশীলতা,ভরসা প্রভৃতি। রেগুলার সঠিক বাহক ও পালনকারী ছিলেন মেরি টেরিজা যাকে আমরা মাদার তেরেসা নামেই চিনি। বিপদের সময় আশ্চর্য রকম ভাবে মানুষের মধ্যে জন্ম নেয় “আয় মোরা দল বেঁধে থাকি” নীতি।যা আমাদের অলক্ষে অতীত থেকে প্রবল ভাবে বিদ্যমান ছিল।।
………××………...

Comments
Post a Comment